✍️ লেখক ও কলামিস্ট: মু. মঈন উদ্দিন
একটি জাতির উন্নয়ন নির্ভর করে শুধু প্রযুক্তি, অর্থনীতি বা অবকাঠামোর ওপর নয়—সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানবসম্পদ। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় নৈতিক শিক্ষা যেন প্রান্তিক এক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাঠ্যপুস্তকে নৈতিকতা বিষয়টি কোথাও সংক্ষিপ্ত, কোথাও একেবারেই অনুপস্থিত। ফলে শিক্ষার্থীরা উচ্চতরশিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে, কিন্তু আদর্শ নাগরিক হয়ে ওঠার মৌলিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সন্তানের হাতে মোবাইল তুলে দেওয়ার আগে, তাদের মনন ও বিবেকের ভেতর যদি মজবুত নৈতিক বুনিয়াদ গড়ে না তোলা যায়, তবে আধুনিকতার নামে সমাজে অবক্ষয়ের বিস্তার ঠেকানো অসম্ভব হয়ে পড়বে। এ অবক্ষয় রোধে শিক্ষার প্রারম্ভ থেকেই চরিত্র গঠনের শিক্ষা অত্যাবশ্যক।
এই বাস্তবতাকে সামনে রেখে এখন সময় এসেছে প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত প্রতিটি শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ ‘নৈতিক শিক্ষা’ অধ্যায় অন্তর্ভুক্ত করার। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সততা, দায়িত্ববোধ, সহানুভূতি, শ্রদ্ধাবোধ, দেশপ্রেম ও মানবিকতা চর্চার ভিত নির্মাণ করা সম্ভব।
নৈতিক শিক্ষার অনুপস্থিতি কেবল ব্যক্তি নয়, পুরো সমাজ কাঠামোকে দুর্বল করে তোলে। আর এই দুর্বল ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে কোনো টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই পাঠ্যবইয়ের প্রতিটি অধ্যায় যেন কেবল তথ্য নয়, হয় উপলব্ধির মাধ্যম; শুধু পরীক্ষা পাস করার উপকরণ নয়, হয় আত্মশুদ্ধির পথপ্রদর্শক।
আদর্শ রাষ্ট্র গড়তে হলে আমাদের দরকার নৈতিকভাবে সুসংগঠিত প্রজন্ম, যারা শুধু প্রযুক্তিনির্ভর নয়, মূল্যবোধনিষ্ঠ, দায়িত্বশীল ও সেবামুখী। তাদের হাতেই হবে সুশাসন, ন্যায়, সাম্য আর মানবিকতার ভবিষ্যৎ।
অতএব, পাঠ্যবইয়ে নৈতিক শিক্ষার অধ্যায় সংযুক্ত করা শুধু সময়ের দাবি নয়—এটি একটি জাতিকে আদর্শ ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে নেওয়ার শিক্ষাগত ও নৈতিক দায়িত্ব।