শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫, ০৫:২৬ পূর্বাহ্ন
                                           
ব্রেকিং নিউজঃ
মধ্যরাতে যৌথবাহিনীর তল্লাশিতে, এলজিইডি প্রকৌশলীর গাড়িতে মিলল ৩৭ লাখ টাকা ৫৬০ টি মডেল মসজিদ নির্মাণে স্বৈরাচার আমলে লাপাত্তা অনিয়ম মুগদা থানা মিনি গার্মেন্টস মালিক সমিতির পক্ষ থেকে ইফতার ও দোয়া মাহফিল উজিরপুরের সাতলা ৯ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র ইফতার ও দোয়া মাহফিল শেষ প্রহরে এক নিঃসঙ্গ আত্মার চিরকালীন যাত্রা নগরীর বিভিন্ন মার্কেটে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পরিদর্শন করেন সিএমপি কমিশনার জনাব হাসিব আজিজ আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৮৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী: এক ঐতিহাসিক প্রতিষ্ঠান গত ৪ দিন ধরে সমুদ্রে ভাসতে থাকা ১৩ জেলেকে উদ্ধার ব্রিজের রড চুরি করায়, বিএনপির ৩ নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের উজিরপুরে চলন্ত পরিবহনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

নিসফে শাবান: রহমত, মাগফিরাত ও আত্মশুদ্ধির পুণ্যময় রাত

✍️লেখক জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ান

শাবান মাসের ১৫ তারিখের রাতে, মুসলিম উম্মাহ এক বিশেষ রাতের আগমন উপলক্ষে প্রতীক্ষা করে—এটি হলো নিসফে শাবান, যা ইসলামী পরিভাষায় লাইলাতুল বরাত (মুক্তির রাত) হিসেবে পরিচিত। এই রাতের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের জন্য এক অনন্য সুযোগ প্রদান করেন, যা আত্মশুদ্ধি, তওবা এবং আল্লাহর অশেষ রহমত লাভের এক মূল্যবান অবকাশ। ইসলামী পরিভাষায় এই রাতটির গুরুত্ব সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসে উল্লেখযোগ্য বর্ণনা রয়েছে, যা মুসলিমদের হৃদয়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভের আগ্রহ উদ্দীপ্ত করে।
নিসফে শাবান এমন এক রাত, যখন আসমান খুলে দেয় আল্লাহর রহমতের দরজা। আল্লাহ তায়ালা এই রাতে পৃথিবীর নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করেন এবং ঘোষণা করেন: “কী কেউ আছো, যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করবো? কেউ আছো, যে আমার কাছে কিছু চাইবে, আমি তাকে দান করবো? কেউ আছো, যে মাফ চাইবে?আমি তাকে মাফ করবো।
এই বিশেষ মুহূর্তে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য এটি এক সুবর্ণ সুযোগ।

হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক রাতে আমি নবী সা. কে (বিছানায়) না পেয়ে তাঁর খোঁজে বের হলাম। আমি লক্ষ্য করলাম, তিনি বাকির কবরস্থানে, তাঁর মাথা আকাশের দিকে তুলে আছেন। তিনি বলেন: হে আয়িশাহ! তুমি কি আশঙ্কা করেছো যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমার প্রতি অবিচার করবেন? আয়িশাহ রা. বলেন, তা নয়, বরং আমি ভাবলাম যে, আপনি হয়তো আপনার কোন স্ত্রীর কাছে গেছেন। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ মধ্য শাবানের রাতে দুনিয়ার নিকটবর্তী আকাশে অবতরণ করেন এবং কালব গোত্রের মেষপালের পশমের চাইতেও অধিক সংখ্যক লোকের গুনাহ মাফ করেন।
(ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১৩৮৯)

এই হাদিস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, নিসফে শাবান এমন একটি সময়, যখন আল্লাহ তায়ালা তাঁর রহমত বৃষ্টি হিসেবে পৃথিবীতে প্রেরণ করেন এবং বান্দাদের জন্য সৎপথে ফিরে আসার একটি সুবর্ণ সুযোগ তৈরী হয়।

নবী করিম সা. এর জীবনে শাবান মাসের বিশেষ গুরুত্ব ছিল।

হযরত আয়েশা রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা. কে শাবান মাসে এত বেশি রোজা রাখতে দেখেছি যে, আমি আর কখনো এত বেশি রোজা রাখতেও তাঁকে দেখিনি।
(বুখারি, হাদিস নং ১৯৬৯)

এটি প্রমাণ করে যে, শাবান মাসে ইবাদত ও রোজার মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ সা. আত্মশুদ্ধি অর্জন করতেন। তিনি জানতেন, এই মাসে আমল আল্লাহর কাছে পেশ করা হয় এবং তিনি চাইতেন তাঁর আমলগুলো সবচেয়ে ভালোভাবে পেশ হোক।
নিসফে শাবান এক অভূতপূর্ব রাত, যখন আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের প্রতি বিশেষভাবে দয়ালু হন। এটি শুধুমাত্র তওবার জন্য নয়, বরং এক নতুন শুরু এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের একটি সুযোগ। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে এই রাতের মহিমা উপলব্ধি করে, প্রতিটি মুসলমান যেন জীবনে সৎপথে চলার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করে।
এ রাতের তওবা শুধু আল্লাহর রহমত লাভের জন্য নয়, বরং আমাদের আত্মিক বিশুদ্ধতার জন্যও অপরিহার্য। আমরা যদি একান্তভাবে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করি, তবে তাঁর অশেষ করুণা ও মাগফিরাত আমাদের জীবনের অন্ধকার দূর করবে এবং পথপ্রদর্শন করবে সঠিক পথে।
নিসফে শাবান একটি আলোকিত রাত, যখন সৃষ্টিকুলের প্রতি আল্লাহর দৃষ্টি পরিপূর্ণ দয়া ও ক্ষমায় পরিপূর্ণ হয়। মুসলমানদের জন্য এটি একটি চমৎকার সুযোগ, নিজেদের ভুল-ত্রুটি শুধরে, নতুনভাবে আল্লাহর পথে ফিরে আসার। সেই মহান সুযোগটি আসতে চলছে আগামী ১৪ই ফেব্রুয়ারি জুমাবার। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এই দিনটিতে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ দান করে গুনাহ মুক্ত হওয়ার তাওফিক দান করুক।(আমিন)

লেখক, শিক্ষার্থী আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় কায়রো, মিশর



ফেইসবুক পেইজ